আর্য্যসৎসঙ্গ আশ্রম

"ব্র:"

 পরম দয়াল পরম প্রেমময় অচ্ছেদ্যবর্ণ মহান পুরুষ শ্রীশ্রীপ্রভুজী মানব জাতির কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে ২০১৪ সালের ৬-ই জুলাই পুরুলিয়ার কাল্লা পুণ্যভূমিতে আর্য্যসৎসঙ্গ আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। আর্য্যসৎসঙ্গ পুরোপুরিভাবে শ্রীশ্রীঠাকুরজী ও শ্রীশ্রীপ্রভুজী'র আশীর্বাদে পূর্বতন ভগবান শ্রীশ্রীঠাকুরের ভাবধারায় এগিয়ে চলেছে। 

 আশ্রমের পশ্চিম দিক দিয়ে একটি নদী প্রবাহিত হয়েছে, আশ্চর্যের বিষয় হলো নদীটির অভিমুখ উল্টোদিকে (দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে), সাধারণত বেশিরভাগ নদী উত্তর থেকে দক্ষিণে বা পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হয়। আমরা অনেকেই জানি নর্মদা নদীর অভিমুখও উল্টোদিকে এবং নর্মদা কত পবিত্র নদী, যার দর্শন মাত্রই মানুষ পাপ তাপ রোগ শোক থেকে মুক্তি পায়। এতো জায়গা থাকা সত্ত্বেও শ্রীশ্রীপ্রভুজী এমন একটি জায়গা কেন পছন্দ করলেন, যেখানে কোনোরকম ভালো যোগাযোগ ব্যবস্তা পর্যন্ত নেই? তবে জায়গাটির যে এক ঐশরিক শক্তি আছে, শান্তি আছে, সেটা আমি জোর দিয়ে বলতে পারি।

 আর্য্যসৎসঙ্গ আশ্রম হলো একটি ধর্মীয় প্রতিষ্টান, যার নামকরণের পিছনে প্রধান কারণ ছিল - পূর্বতন ভগবান শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র আর্য্যভারত  গড়ে তুলতে  চেয়েছিলেন কিন্তু তিনি তাঁর শেষ জীবনে বার বার বলে গিয়েছিলেন - একটা মানুষ পেলাম না, তাই আমার পরম আরাধ্য শ্রীশ্রীপ্রভুজী আর্য্যভারত গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে, আর্য্যবিধানকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাঁর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছেন আর্য্যসৎসঙ্গ। আশ্রমটি পুরুলিয়া শহর থেকে প্রায় ৩০ কিমি দূরে পারা থানার অন্তর্ভুক্ত কাল্লা গ্রামে অবস্থিত। সব থেকে কাছের রেল স্টেশনটির নাম - কুস্তাউর, যেটি আদ্রা থেকে পুরুলিয়া যেতে ২টি স্টেশন পরে এবং কাছের বাসস্ট্যান্ডের নাম - নডিহা। 

 একটা সময় ছিল যখন মানুষের ঘরে গোয়াল ভরা গরু থাকতো, গোলা ভরা ধান থাকতো, পুকুরভরা মাছ থাকতো, সামাজিক পরিবেশের মধ্যে প্রতি প্রত্যেকে মিলেমিশে বসবাস করতো, মানবজীবন কত সুন্দর আনন্দময় ছিল।  কিন্তু আজ মানুষের জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে, অনেকেই এখন খুব একা। তাই আজ আমাদের জীবনে আর্য্যসৎসঙ্গের খুব বেশি প্রয়োজন। আর্য্যসৎসঙ্গের লক্ষ্য হলো - "বাঁচো এবং বাড়ো", ও তার সাথে - "মরো না, মেরো না, পার তো মৃত্যুকে অবলুপ্ত করো"। অনেকেই আছে দেখবেন যারা স্টেশনে বা ফুটপাতে রাত কাটায় তারা শুধু বেঁচেই আছে কিন্তু তাদের জীবন বর্ধন নেই।  

 শ্রীশ্রীঠাকুরের একটি বাণী মনে পড়ে যাচ্ছে - "বাঁচতে নরের যা যা লাগে, তাই দিয়েই তো ধর্ম জাগে।" শ্রীশ্রীপ্রভুজী তাঁর সন্তানদের বাঁচা বাড়ার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছেন তাঁর এই আশ্রমে। কৃষিকাজ যে জৈব পদ্ধতিতে কত সহজে পুরুলিয়ার মতো দুর্গম জায়গায় করা যায়, তার এক জীবন্ত উদাহরণ হলো আর্য্যসৎসঙ্গ আশ্রম। জলের যাতে কোনোরকম অসুবিধা না হয়, তার জন্য আশ্রমের পশ্চিম দিকে নদী ও আশ্রমের মধ্যে পদ্মপুকুর থাকা সত্ত্বেও তিনি ব্রহ্মকুণ্ড স্থাপন করেছেন, যদিও ব্রহ্মকুণ্ড স্থাপনের আর একটি আলাদা গুরুত্ব আছে। আশ্রমে তাঁর সন্তানদের জন্য - মন্দির, ব্রহ্মসোয়ামীধাম, অফিস, বিদ্যালয়, সবজিভান্ডার, বিশ্রামাগার, আনন্দভোগ, শৌচালয়, পানীয় জলের সুবিধা, বিদ্যুৎ-এর ব্যবস্থা, সবকিছুই পর্যাপ্ত পরিমানে আছে। আশ্রমের দ্বার সবার জন্য খোলা, ধনী, দরিদ্র, হিন্দু, মুসলমান, সবার জন্য।  

 আশ্রমের মন্দিরে দুইটি আসন, একটি তে শ্রীশ্রীঠাকুরজী'র বিগ্রহ ও ঠিক তার ডানপাশে শ্রীশ্রীপ্রভুজী'র বিগ্রহ। শ্রীশ্রীঠাকুরজী ও শ্রীশ্রীপ্রভুজী হলেন একে অন্যের আরাধ্য, একজন সবসময় অন্যজনকেই প্রাধান্য দেন - বলেন আমি কিছু না, সব তাঁরই ইচ্ছায় হচ্ছে। ঠিক যেমন শ্রীশ্রীঠাকুর বলতেন পরমপিতা যা বলেন আমি তাই বলি, যা করান তাই আমি করি, আবার পূর্বতন ভগবান শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণদেব মা(ভবতারিণী মা)-এর কথা বলতেন সবসময়। মন্দিরের সামনে ব্রহ্মসোয়ামীধামে'র বারান্দা, যেখানে প্রতিদিন প্রাতঃকালে ও সন্ধ্যায় বিনতি প্রার্থনা হয়।  এই প্রার্থনায় তাঁর সকল সন্তানরাই অংশগ্রহণ করে। শ্রীশ্রীপ্রভুজীর থেকে শুনেছি যারা সেভাবে ঠিক করে নামধ্যান করতে পারে না বা সময় পায় না, তারা এই প্রার্থনাতে অংশগ্রহণ করলেও অনেক উপকার হয় তাদের জীবনে। আশ্রমে ৬-৭ জন কর্মী সবসময় থাকে, যারা আশ্রমে পূজার ব্যবস্তা, আশ্রমে পরিষ্কার রাখা, কৃষিকাজ দেখাশোনা, গোমাতাকে দেখাশোনা, আনন্দভোগ রান্না করা সব কিছু করে। 

 শ্রীশ্রীপ্রভুজী তাঁর নিজস্ব তত্বাবধানেই আশ্রম পরিচালনা করেন এবং তিনি তাঁর অত্যন্ত প্রিয় আদরের সন্তান তাঁরই পুত পবিত্র পাঞ্জাবাহী কর্মী সহ-ঋত্বিকাচার্য্যদেব শ্রীশক্তিপদ মাহাত মহাশয়কে দায়িত্ব দিয়েছেন - যখন তিনি আশ্রমে সশরীরে না থাকবেন তখন সবকিছু দেখাশোনা করার। আশ্রমের ভূমি দান করেছিলেন এই কাল্লা নিবাসী তাঁরই পুত পবিত্র পাঙ্গাবাহী কর্মী সহ-প্রতিঋত্বিকদেবতা শ্রদ্ধেও  ঁজগন্নাথ মাহাত মহাশয়। আশ্রমটি প্রায় ৫০ বিঘা জমির গড়ে উঠেছে, যেখানে প্রায় ৬-৭ বিঘা জমির ওপর কৃষিকাজ হয়, প্রায় ৪-৫ বিঘার মধ্যে আছে ব্রহ্মসোয়ামিধাম, সবজিভাণ্ডার, আনন্দভোগ, বিদ্যালয়, কর্মীদের থাকার জায়গা ও শৌচালয়, ৩-৪ বিঘার মধ্যে ব্রহ্মকুণ্ড, আর বাকি সব ফাঁকা পড়ে আছে - ভবিষ্যতে যেখানে অনেক কিছু হবার পরিকল্পনা আছে। আশ্রমের চারিদিকে প্রায় ২-৩ কিমি পর্যন্ত কোনো ঘরবাড়ি বা গ্রাম নেই, আগেই বলেছি যোগাযোগ ব্যবস্থার খুবই অভাব, তবে খুব শান্ত পরিবেশ, আশ্রমিক পরিবেশ এরকমই দরকার। আশ্রমে কখনো কিছু দরকার পড়লে ৫ কিমি যেতে হয়, দুইটি জায়গা আছে - উদয়পুর ও নডিহা, যেখানে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষগুলি পাওয়া যায়। আশ্রমে একটি মোটর সাইকেল আছে, ওটা নিয়েই যাওয়া হয়। বড় কিছু সমস্যা হলে পুরুলিয়া শহরে যেতে হয়। 

আশ্রমে প্রতি বছর যে অনুষ্ঠানগুলি হয় - 

  • ১৫ই জানুয়ারী - শ্রীশ্রীঠাকুরজীর জন্মমহোৎসব
  • ৩রা সেপ্টেম্বর - শ্রীশ্রীপ্রভুজীর জন্মমহোৎসব
  • দোলপূর্ণিমা তিথিতে - স্নানযোগ উৎসব 
  • তালনবমী তিথিতে - শ্রীশ্রীঠাকুরের জন্মতিথি পালন 
  • ১৯শে নভেম্বর - কল্পতরু দিবস 
  • দুর্গাপূজার সময় - স্বস্তি-স্বস্ত্যয়ন যজ্ঞ
এছাড়া বর্ষাকালে ধানরোপনের সময়েও উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। আশ্রমের কিছু ছবি এখানে দিয়ে দিলাম, সবাই ভালো থাকবেন। 

আর্য্যসৎসঙ্গ আশ্রম on Google Maps
https://goo.gl/maps/SnXE1vhTVcrMw3Wy8





"বন্দে উত্তমপুরুষোত্তমম্।"

Comments